ওয়ার্ডপ্রেস কি এবং এর সুবিধা-অসুবিধা কি?

what is wordpress

What is WordPress & Benefit of WordPress in Bangla

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে সিস্টেম কোডিং দক্ষতা ছাড়াই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার এবং মেনটেন করার সেটি- ই হলো ওয়ার্ডপ্রেস। এটি মূলত একটি Open Source Content Management system. ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে একটি  পরিপূর্ণ এবং ফাংশনাল ওয়েবসাইট অতি সহজেই তৈরি করা যায় যার জন্য কোন কোডিং জানা লাগবে না।

আপনি যদি কোনদিন নাও শুনে থাকেন ওয়ার্ডপ্রেস শব্দটি তাহলেও কোন সমস্যা নেই। আজকে আমরা ওয়ার্ডপ্রেস কি, এর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

ওয়ার্ডপ্রেস কি? – What is WordPress?

ওয়ার্ডপ্রেস হলো বহুল ব্যবহৃত এমন একটি কনটেন্ট মেনেজমেন্ট সিস্টেম যার মাধ্যমে সহজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় এবং সেই ওয়েবসাইট মেনটেইন করা যায়।

এটি মূলত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ PHP দিয়ে তৈরি, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ, এটি একটি ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম। ডেভেলপাররা ওয়ার্ডপ্রেসের রুলস ফলো করে প্রতিনিয়ত এতে কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছে। ফলে আমরা হাজারো থিম, প্লাগিন বিনামূল্যে ব্যবহার করে আমাদের কাঙ্খিক্ষত ওয়েবসাইটকে মনের মত করে সাজিয়ে নিতে পারছি।


এখন, অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আবার কী? ওয়ার্ডপ্রেসের সাথে এই কথাটা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কথা বললেই সবার প্রথমে এই কথাটাটাই শুনতে পাই।

আমি জানি এই প্রশ্নটা আপনার মনে যে উঁকি দিবে যদি আপনি বিগিনার হয়ে থাকেন।

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সি এম এস

আচ্ছা, এবার তাহলে আমরা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংক্ষেপে যাকে বলে সি এম এস, সেই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

একটা ওয়েবসাইটে আসলে কী কী থাকে? যেমন ফেইসবুকের কথাই ধরা যাক।

ফেইসবুকে আমরা লেখা লিখি সাথে ছবি আপলোড করি, অনেকে ভিডিও আপলোড করে থাকে, তাই না? এই যে, আমরা ছবি, ভিডিও, অডিও, লেখা দিয়ে প্রতিনিয়ত পোস্ট করছি তাকেই মূলত ওয়েবের ভাষায় বলা হয় কনটেন্ট। আর ম্যানেজমেন্ট কি তাহলে?

ম্যানেজমেন্ট হল আমরা ফেইসবুকে পোস্ট করার সময় আপলোড করার যে সুন্দর সিস্টেম পাই, ফটো বা ভিডিও আপলোড করার জন্য আমাদের কোন কোডিং জানতে হয় না, মোবাইলের গ্যালারি থেকে আমরা সহজেই তা করে ফেলতে পারি তাই হলো মূলত ম্যানেজমেন্ট। 

তো, তাহলে বুঝতেই পারছেন ওয়েবসাইটেও আমাদেরকে ছবি, ভিডিও, অডিও লেখা তথা কন্টেন্ট পোস্ট করতে হয়। আমরা যেন সহজেই সেই কাজগুলো করতে পারি তার জন্য ডেভেলপারের মাধ্যমে PHP প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কোডিং করে এই সিস্টেম তথা ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করা হয়েছে।
কিন্ত, আমাদের কোন কোডিং জানা লাগবে না এভাবেই সেটা তৈরি করা হয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি পপুলার ওয়েবসাইট

আপনি কি জানেন ওয়ার্ডপ্রেস কতটুকু পপুলার একটি সি এম এস? বর্তমানে প্রায় ৩৫% ওয়েবসাইট তৈরি হয় ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে। এর ইউজার ফ্রেন্ডলি ম্যানেজমেন্ট ই এটিকে শীর্ষে নিয়ে গেছে।
বিশ্বের তাবত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ব্লগ ওয়েবসাইট এই সি এম এস দিয়ে তৈরি। ফেইসবুক নিউজরুম, মাইক্রোসফট এর ব্লগ সহ অনেক ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো-

  • হোয়াইট হাউস এর অফিশিয়াল ব্লগ
  • মাইক্রোসফট এর অফিশিয়াল ব্লগ
  • ফেইসবুক নিউজরুম
  • ফ্লিকার ব্লগ
  • বিবিসি আমেরিকা
  • টেক ক্রাঞ্চ
  • এংরি বার্ডস
  • স্টার ওয়ারস এর অফিশিয়াল ব্লগ
  • ইয়েপ ব্লগ
  • দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস
  • দ্যা ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি
  • এমটিভি নিউজ
  • মজিলা ব্লগ
  • দ্য হার্ভার্ড গেজেট
  • রিডারস ডাইজেস্ট
  • সি এন এন প্রেস রুম

ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা

ওয়ার্ডপ্রেসে হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি সি এম এস। সুতরাং, যে কেউ বিনামূল্যে অল্প সময়ের মধ্যে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবে এবং সহজেই মেনটেইন করতে পারবে। এর সুবিধা বলে শেষ করা যাবে না।

নিচে কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলো সহজে বোঝার জন্য:

  • ওয়ার্ডপ্রেস ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম হওয়ায় বিনামূল্যে যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।
  • একটি বহুল ব্যবহৃত সি এম এস। ওয়ার্ডপ্রেস ছাড়াও অনেক সি এম এস আছে তবে ওয়ার্ডপ্রেসের দখলে প্রায় ৩৫% ওয়েবসাইটের রাজত্ব।
  • নিজের মত করে কাস্টমাইজ করা যায়।
  • আশে পাশে তাকালেই এর বড় একটা কম্যুনিটি লক্ষ্য করা যায়। তাই কোন রকম সমস্যায় পড়লে কম্যুনিটি সাপোর্ট সহজেই পাওয়া যায়।
  • সহজেই ফাংশনালিটি এড করে নেয়ার জন্য অসংখ্য প্লাগিন রয়েছে। একটু চেষ্টা করলে নিজে নিজেই এই প্লাগিন ব্যবহার করে কাঙিক্ষত ফাংশনালিটি এড করে ফেলা যায়।
  • একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি সিস্টেম হওয়ায় যে কেউ ব্যাসিক কাজগুলো করে ফেলতে পারবে।
  • থিম কাস্টমাইজ করে আকর্ষণীয় ডিজাইন করা যায় ওয়েবসাইটের সেজন্য থিম কাস্টমাইজেশন শিখতে হয়। এজন্যও কোডিং প্রয়োজন হয় না।
  • থিম কাস্টমাইজ করার কাজ শিখে নিলে চাইলে ওয়েবসাইট কাস্টমাইজ করে প্রফেশনাল সার্ভিস দিয়ে ইনকাম সোর্স জেনারেট করা যায়।
  • ওয়ার্ডপ্রেস একটি এস ই ও ফ্রেন্ডলি সি এম এস সুতরাং, আপনার যদি ফোকাস থাকে এস ই ও তাহলে আপনার জন্য আইডিয়াল চয়েজ হলো ওয়ার্ডপ্রেস। এস ই ও সম্পর্কে জানা থাকলে প্লাগিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের অনপেইজ এস ই ও সহজেই করে ফেলতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের অসুবিধা

প্রতিটি কাজের যেমন সুবিধা-অসুবিধা থাকে তেমনি ওয়ার্ডপ্রেসেরও কিছু অসুবিধা রয়েছে। সুবিধার কথা শুনে কাজ শুরু করার পূর্বে আমাদেরকে অসুবিধাগুলো কি কি জেনে নেয়া প্রয়োজন যেন বিড়ম্বনার স্বীকার না হতে হয়।

চলুন ওয়ার্ডপ্রেসের অসুবিধাগুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক।

ওয়েবসাইট স্লো হয়

যেহেতু ওয়ার্ডপ্রেস থিম এবং প্লাগিনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে তাই অনেকেই কাস্টমাইজ করার সময় প্রচুর প্লাগিন ব্যবহার করে থাকে। আর এজন্য ওয়েসাইট ভারী হয় এবং সাইট দ্রুত লোড হয় না। এই জন্য অবশ্যই স্পিড অপটিমাইজেশন করতে হয়।

কাস্টমাইজেশন লিমিটেশন

যেহেতু যে কেউ এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারে কোন কোডিং জানার প্রয়োজন হয় না তাই সিস্টেমকে সহজ করার জন্য কিছু লিমিটেশন আছে। সেটার জন্য অবশ্যই কোডিং জানা প্রয়োজন। 

যেমন: আপনি ওয়েবসাইটের এক জায়গায় একটা ডিজাইন করতে চাচ্ছেন সেটা প্লাগিন দিয়ে বা কাস্টমাইজেশন স্কিল দিয়ে সম্ভব না সেজন্য কাস্টম কোড করতে হবে। 

তবে সেটা এমন পর্যায়ে প্রয়োজন যখন একটি ওয়েবসাইটকে আরো আকর্ষণীয় এবং ইউনিক করার প্রয়োজন হবে অথাৎ, থিম বা প্লাগিনের ডিজাইন থেকেও এক্সপেকটেশন হাই থাকবে।

বেশি ভিজিটরের ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে আইডিয়াল না

আপনার যখন অনেক বড় একটা ক্ষেত্র তৈরি হয় বিজনেসের যেমন: দারাজ, চালডাল এর মত ওয়েবসাইট কিংবা ব্যাংকের ট্র্যানজেকশনের জন্য ওয়েবসাইট প্রয়োজন তখন ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য আইডিয়াল না। কাস্টম কোডিং করে ভালো ডেভেলপারের মাধ্যমে সেটি করা প্রয়োজন। তবে ছোটখাট ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে সমস্যা নাই।

থিম প্লাগিন

ওয়ার্ডপ্রেস এর রয়েছে অসংখ্য থিম এবং প্লাগিন। থিম হল একটা ওয়েবসাইট এর ডিজাইন করে রাখা প্রি-মেইড টেমপ্লেট। আপনার ওয়েবসাইট এর ডিজাইন কেমন হবে সেটা নির্ভর করে থিম নির্বাচন করার উপর। আর প্লাগিন এক্সট্রা ফাংশনালিটি এড করে নিতে ব্যবহৃত হয়।

যেমন: আপনার ওয়েবসেইটে একটি কন্টাক্ট আস পেজ প্রয়োজন। ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ যেন আপনার দেয়া ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারে। এই জন্য Contact form 7 নামে বহুল ব্যবহৃত একটি প্লাগিন রয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস রিপোজিটরীতে ফ্রি থিম এবং প্লাগিন ছাড়াও কিছু মার্কেট রয়েছে যারা প্রিমিয়ম থিম এবং প্লাগিন সেল করে থাকে। যেগুলো খুব আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং ব্যাসিক ফ্যাংশনালিটি এড করে তৈরি করা। অনেক গুলো নমুনা ডিজাইন (Demo) দেয়া থাকে বাঁচাই করে যে কোন ডেমো প্রয়েজন মত নেয়া যায় এবং সেটি কাস্টমাইজ করে চমৎকার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। 
জনপ্রিয় একটি মার্কেট হচ্ছে Themeforest যেখান থেকে থিম বা প্লাগিন কিনতে হলে ডুয়াল কারেন্সি মাস্টারকার্ড প্রয়োজন হয়।

পেজ বিল্ডার

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটি হল পেজ ডিজাইন করার জন্য একটি প্লাগিন। একটি ওয়েবসাইটে অনেক গুলো পেজ থাকে। সরাসরি ওয়েবসাইটে ঢুকলে প্রথম যে পেজটা আমরা দেখতে পাই তা হলো- হোমপেজ। এছাড়াও থাকে এবাউট আস, যোগাযোগ, সার্ভিস সহ আরো প্রয়োজনীয় পেজ। তবে প্রধান পেজটি হলো হোমপেজ এই হোমপেজের ডিজাইন থেকেই একটা ওয়েবসাইট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। আর তাই এই পেজটিকে আকর্ষনীয় করে সাজাতে হয়।

পেজ বিল্ডার ওয়েবসাইটের পেজগুলোকে ডিজাইন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজ বিল্ডার হল এলিমেন্টর (Elementor)। এর দুটি ভার্সন রয়েছে ফ্রি এবং প্রো। এছাড়াও বেশ কিছু পেজ বিল্ডার যেমন: ভিজুয়াল কম্পোজার (WP Bakery Page Builder), বীভার বিল্ডার (Beaver Builder), অক্সিজেন (Oxygen) মার্কেটে রয়েছে।

তো, এই আর্টিক্যালে বলার চেষ্টা করেছি কোডিং ছাড়াই ওয়েবসাইট বিল্ড করা যায় এমনই একটি জনপ্রিয় সি এম এস নিয়ে।

আশা করছি নতুনরা এই আর্টিক্যালটি থেকে উপকৃত হয়েছেন। আরো কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলে কমেন্ট বক্স তো আছেই।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!